বর্তমান সময়ে আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসাহী হয়ে উঠছেন প্রচুর সংখ্যক গ্রাহক। সমৃদ্ধি ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থাপন করে গ্রাহকগণ বিনিয়োগের আস্থা রাখছেন আবাসন প্রকল্পে। গ্রাহকদের এই উৎসাহ কাজে লাগিয়ে, আধুনিক ও নাগরিক জীবন যাপনের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা সম্বলিত অনেক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। তবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ থানায় আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ঠিকানা সুনিশ্চিত করা হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেয়া যাক আবাসন প্রকল্পে কেরানীগঞ্জে বিনিয়োগ কেনো হতে পারে লাভজনক-
কোটি মানুষের জীবিকার আশ্রয়স্থল রাজধানী ঢাকা। প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন ঢাকা শহরে। আর আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবস্থানগত দিক থেকে সবচেয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে অদূর ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানায় বিনিয়োগ করা, যেখানে নিরিবিলি ও নান্দনিক-নাগরিক জীবন যাপনে যাতায়াত নিয়ে থাকবে না কোনো দুশ্চিন্তা।
অবস্থানগত সুবিধা:
অবস্থানগত দিক থেকে কেরানীগঞ্জ একটি সুন্দর ভবিষৎ ঠিকানা নিশ্চিত করণে আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগর জন্য উপযুক্ত স্থান। নগরীর কেন্দ্র থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই কেরানীগঞ্জ, যার ফলে যাতায়াতের জন্য বেগ পেতে হবে না বিনিয়োগ প্রত্যাশী গ্রাহকগণের। কেরানীগঞ্জের অবস্থান ঢাকার অদূরে হওয়ায় খুবই সহজে যাতায়াত করা যায় যার ফলে আবাসিক প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রেতাগণ এর উৎসাহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া কেরানীগঞ্জে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ঢাকার অন্যান্য স্থানের তুলনায় কেরানীগঞ্জে জমির মূল্য এখনও অপেক্ষাকৃত কম। ফলে ভবিষ্যতে জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেন। অবস্থানগত সুবিধা বিবেচনায় ইতিমধ্যেই কেরানীগঞ্জে গড়ে উঠেছে নানান আবাসন প্রকল্প যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবাসন প্রকল্প ম্যাক্সওয়েল ওয়েস্টার্ণ সিটি।
পরিবহন এবং যোগাযোগ:
আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষণীয় বিষয় প্রকল্পে যাতায়াতের পরিবহন তথা যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী (বছিলা ব্রিজ) পার হয়ে কেরানীগঞ্জের ঠিকানা। জনসাধারনের যাতায়াত এর সুবিধার্থে বছিলা ব্রিজ এর দু’পাশের রাস্তা সংস্কার করে তৈরি হবে ১২০ ফিট (প্রস্তাবিত) রাস্তা। ভেঙ্গে ফেলা হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী (বছিলা ব্রিজ)। তবে ব্রিজ ভাঙ্গার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সেতু তৈরি করা যার ফলে যাতায়াত ক্ষেত্রে থাকবে না কোনো ভোগান্তি এবং বিভিন্ন প্রধান সড়ক ও সেতু ব্যবহার করা অনায়াসেই যাত্রীগণ যাতায়াত করতে পারবেন নিজ নিজ ঠিকানায়। যানজট সমস্যা নিরসনে কেরানীগঞ্জে গড়ে উঠবে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাসগুলো রাজধানীর ভেতরে প্রবেশ করায় যানজট বাড়ে বহুগুণ। তাই কেরানীগঞ্জের বাঘাইড় এলাকায় তৈরি হবে আন্তজেলা বাস ও শহরের বাসের জন্য টার্মিনাল, যার ফলে নিরসন হবে যানজট সমস্যা। ইতিমধ্যে এটি করার জন্য নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
এছাড়াও কেরানীগঞ্জে তৈরি হচ্ছে ১৭০ ফিট ওয়েস্টার্ন বাইপাস যা সংযুক্ত হবে মাওয়ার সাথে এবং এখানেই তৈরি হবে দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। ইতিমধ্যেই মাওয়া পয়েন্টে এই ওয়েস্টার্ন বাইপাস এর কাজ শুরু হয়েছে। আগামীতে মেট্রোরেল এবং বিআরটি বাস সার্ভিস ব্যবস্থা কেরানীগঞ্জে সম্প্রসারিত হতে পারে, যা যাতায়াতের সময় এবং খরচ কমাবে।
বাণিজ্যিক সম্ভাবনা:
ভবিষ্যৎ ঢাকার আধুনিক বাণিজ্যিক অঞ্চলের ঠিকানা হিসেবে গড়ে উঠবে কেরানীগঞ্জ। ইতিমধ্যেই কেরানীগঞ্জ কে আধুনিক বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র জনাব ফজলে নূর তাপস, যার ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চলে শিল্প এলাকার বিকাশ নজর কারার মতো। নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ফলে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা নতুন বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করবে।
এছাড়াও কেরানীগঞ্জে হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিলে এই আইটি পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। হাই-টেক পার্ক তৈরির ফলে তরুণরা গতানুগতিক ব্যবসা-বাণিজ্যর বদলে অনলাইনে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারবে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা:
উন্নত মানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কেরানীগঞ্জে গড়ে উঠছে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। পপুলার মেডিকেল কলেজ ও ইউডা বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থায়ী ঠিকানাও এখন কেরানীগঞ্জ। এরই সাথে আরও গড়ে উঠছে নানা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানের স্কুল ও কলেজ। যার ফলে সুশিক্ষা ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রার মান হবে উন্নত এবং সমৃদ্ধশীল।
প্রাকৃতিক পরিবেশ:
ব্যস্ততার নগরী ঢাকার প্রায় সকল জায়গাই যানজট ও কোলাহলপূর্ণ, যার ফলে নিরিবিলি পরিবেশে জীবনযাপনের স্বপ্ন মূর্ছা যায়। তবে এই সমস্যারও রয়েছে সমাধান। কেরানীগঞ্জের বেশ কিছু স্থান এখনও প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর এবং খোলামেলা, যা বসবাসের ঠিকানা কে গড়ে তুলবে মনোরম ও স্বাস্থ্যসম্মত। শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় বসবাসের জন্য পাওয়া যাবে শান্তিপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
বিনোদন সুবিধা:
রাজধানী ঢাকায় খেলার মাঠ ও পার্কের সংখ্যা দিন দিন কমেই চলেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকার কেরানীগঞ্জে শেখ রাসেল ওয়াটার বেইজড বিনোদন পার্ক নামে একটি বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ঘাটারচর এলাকায় প্রায় ২০ একর জমিতে নির্মিত হবে এ পার্কটি। পার্কটির কাজ শেষ হলে কেরানীগঞ্জ এলাকায় আধুনিক নাগরিক সুবিধা ও নতুন শহরে বিনোদনের অভাব পূরণ হবে। এ ওয়াটার পার্কে থাকবে অ্যাম্পিথিয়েটার, কমিউনিটি সেন্টার, অফিস ভবন, ওয়াচ টাওয়ার, ব্যায়ামাগার, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, বাইসাইকেল লেন, ফুটপাত, লেক, সাবস্টেশন, সবুজ এলাকা, ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ জলাশয়/লেক ও পর্যাপ্ত কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়ন হলে বিনোদনের একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। এ বিনোদন কেন্দ্রটি ওয়াটার বেইজ করা হচ্ছে। তাই পানিকেন্দ্রিক মানুষের একটু আনন্দ-বিনোদনের ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি একটু বাড়তি আনন্দ দিতে নানা ধরনের সরঞ্জাম রাখা হবে এই পার্কে।
এছাড়াও কেরানীগঞ্জের আরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র/দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন- সাউথ টাউন মসজিদ, ধলেশ্বরী নদী, বসুন্ধরা পার্ক, মেরিন শিশু পার্ক, ধলেশ্বরী রির্সোট, ম্যাজিক আইল্যান্ড, সারিঘাট ইত্যাদি।