বিনিয়োগ নিয়ে কথা উঠলে আমাদের মাথায় নানা ধরনের প্রশ্ন আসে। কোথায় বিনিয়োগ করলে লাভ বেশি হবে? ঝুঁকি কম কোথায়? কারণ, জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধি আনতে প্রতিটি মানুষই চায় নিরাপদ ও লাভজনক কোনো ব্যবসায়িক খাতে বিনিয়োগ করতে যাদের মধ্যে আবাসন খাতে বিনিয়োগ অন্যতম। বিনিয়োগ প্রত্যাশীগণ নানা খাতে বিনিয়োগ করে তাদের সম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা করে থাকেন। সম্পত্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক ও লাভজনক খাতে সুষ্ঠু বিনিয়োগ। তাই, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিবেশে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের সন্ধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে অর্থনৈতিক মন্দার পর, প্রায় প্রতিটি ব্যবসায়িক খাতই ধীরে ধীরে পুনরায় ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে। অর্থ বিনিয়োগের নানা খাত থাকলেও একটি খাত, যা সবসময়ই নির্ভরযোগ্য ও লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়, সেটি হলো আবাসন খাত। আবাসন খাতে বিনিয়োগ শুধু স্থায়ী সম্পদে রূপান্তরিত হয় না সাথে সাথে এটি দীর্ঘমেয়াদে উল্লেখযোগ্য মুনাফাও প্রদান করতে সক্ষম।
আবাসন খাতে বিনিয়োগ শুধু একটি স্থিতিশীল আর্থিক পরিকল্পনার অংশ নয়, এটি একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি গঠনের অন্যতম উপায়। একটি সফল জীবনযাত্রার জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আবাসন খাতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য বিনিয়োগ খাতের তুলনায় বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগের প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কেন আবাসন খাতে করবেন আপনার মূল্যবান অর্থ বিনিয়োগ? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়! চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক, আবাসন খাতে বিনিয়োগের বিস্তারিত বিষয়সমূহঃ
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
মানুষের জীবনের বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ যেকোনো পরিকল্পনা নিশ্চিতকরণে অন্যতম একটি প্রভাবক হচ্ছে তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সকল মানুষই চায় তার অর্থনৈতিক অবস্থান স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে, এক্ষেত্রে আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে ইতিমধ্যেই স্বীকৃত।
ধরুন আপনি নগদ অর্থের বিনিময়ে কিছু পরিমাণ জমি ক্রয় করলেন, এতে বর্তমান সময়ে আপনার নগদ অর্থ হ্রাস পেলেও দীর্ঘমেয়াদী বিবেচনায় আপনি একটি স্থায়ী সম্পদের মালিকানা লাভ করবেন যা আপনার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখবে।
আবাসন খাতে বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীর স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবলম্বন তৈরি করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। সম্পত্তি বা জমি ক্রয় করার মাধ্যমে আপনি একটি স্থায়ী সম্পদ অর্জন করতে সক্ষম, যা কালের পরিক্রমায় মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে বিনিয়োগকারীর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। যার ফলে আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয় এবং আপনি একটি সুদৃঢ় ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হতে পারেন।
স্থায়ী সম্পদের নিশ্চয়তা
আবাসন খাতে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এই খাত আপনার বিনিয়োগকে স্থায়ী সম্পদে রূপান্তর করে। জমি বা ফ্ল্যাটের মালিকানা সবসময়ই একটি স্থায়ী সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায় না।
অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও বাজারের ওঠানামা সত্ত্বেও, আবাসন খাতের সম্পদ সাধারণত তার মূল্যমান ধরে রাখে বা সময়ের সাথে সাথে তার মূল্য বৃদ্ধি পায়। যেহেতু সময়ের সাথে সাথে জমির মূল্যমান ক্রমবর্ধমান সেহেতু গ্রাহক হিসেবে আপনি স্থায়ী সম্পদের মালিকানায় নিশ্চিত থাকতে পারবেন যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার সম্পদ বৃদ্ধি করতে সক্ষম। যার ফলে আপনার ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে সুন্দর ও নিশ্চিত।
কর সুবিধা
প্রতিটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অথবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কারী ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর অবশ্যই প্রদান করতে হয়। অন্যান্য খাতের তুলনায় আবাসন খাতে বিনিয়োগের একটি প্রধান সুবিধা হলো কর ছাড়ের সুযোগ।
অন্য যেকোনো খাতে বিনিয়োগ করলে আপনি যতটুকু সুবিধা পাবেন তার চেয়ে বেশি সুবিধা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে উপভোগ করতে পারবেন। কারন, আবাসন খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা প্রদান করা হয়। মর্টগেজ ইন্টারেস্ট, প্রপার্টি ট্যাক্স, এবং অন্যান্য খরচ সহ আরও নানান বিষয়ে কর ছাড়ের সুবিধা বিনিয়োগকারীরা ভোগ করতে পারেন। যা বিনিয়োগকারীদের আয়কর কমিয়ে আনার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
এ ছাড়াও, যদি সম্পত্তির মূল্যমান কোনো কারনবশত হ্রাস পায়, সেক্ষেত্রে কর ছাড় পাওয়ার সুবিধা পাওয়া যায়, যা বিনিয়োগকারীদের আয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
প্যাসিভ আয়ের সুযোগ
খুব বেশি পরিশ্রম ছাড়া কোন খাত বা উৎস থেকে যে আয় করার সুযোগ তৈরি হয় যা কোন ব্যক্তির আয়ের মূল উৎস নয়, এই রকম আয় কে প্যাসিভ আয় বলা হয়। যেমন আপনি একটি বাড়ি ক্রয় করে সেটি ভাড়া দিয়ে দিলেন, এই বাড়ি ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ আপনার প্যাসিভ আয়।
আবাসন খাতে বিনিয়োগ হতে পারে আপনার প্যাসিভ আয়ের একটি অন্যতম সুযোগ। আপনার বিনিয়োগকৃত আবাসন ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে আপনি নিয়মিত আয় করতে পারেন যা একদিকে আপনার মাসিক ব্যয়ভার হ্রাস করতে সহায়ক হবে, অন্যদিকে আপনার মোট আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি করবে। এই প্যাসিভ আয়ের সুযোগ একটি দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী আয় হিসেবে কাজ করে, যা আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনায় সুরক্ষা এনে দিতে সক্ষম।
মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষাঃ
মুদ্রাস্ফীতির কারণে সময়ের সাথে সাথে মুদ্রার মান কমতে পারে তবে সম্পত্তির মূল্যমান হ্রাস পায় না। মুদ্রার মান ও পন্যের মূল্য বিপরীতমুখী স্বভাবের হওয়াতে মুদ্রার মান কমলে পন্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় ফলে স্বভাবতই সম্পত্তির মূল্যও বৃদ্ধি পায়।
আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে মুদ্রাস্ফীতির কারণে আপনার সম্পদের মূল্য হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।। কারন, আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ আপনাকে একটি স্থায়ী সম্পত্তির মালিকানা প্রদান করে যা মুদ্রাস্ফীতির সময়ে আপনাকে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করবে।